বেঁচে থাকুক বাউলবাদী দর্শন| Tapan's Blog
অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে বাঃদেশে একদদল রহস্যবাদী সাধকের জন্ম হয়েছিলো। তাঁরা গান করতেন বেশির ভাগই আধ্যাত্মবাদী ও দেহত্ববাদী কথার সুরে। গানের মাধ্যমেই তারা তাদের মত বা দর্শন প্রচার-প্রসার করে গেছেন। মূলত অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া ঐ রহস্যবাদীরাই পরবর্তীতে পরিচিতি লাভ করলো "বাউল" সম্প্রদায় নামে।
অনেকেই মনে করেন মরমিবাদী দর্শনের সাথে বাউল দর্শনের অনেকটে যোগসূত্র আছে বা রয়েছে। তবে আমার ব্যাক্তি ধারণা অর্থাৎ আমি যা মনে করি তা হলো "মরমিবাদী" দর্শনের সাথে "বাউল" দর্শনের সেরকম কোন গভীর যোগসূত্র নেই। কারণ, মরমিবাদী দর্শন পরমসত্বার সাক্ষাত সাধন পেতে চাই। কিন্তু বাউলবাদী দর্শন পরমসত্বার সাক্ষাত নয় তারা প্রেমতত্বে বিশ্বাসী। বাউলেরা জগৎ সংসারকে উপেক্ষা করে অধ্যাত্মিক ধ্যানে মগ্ন থাকেন এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন। হিন্দু, মুসলমান বলে বাউল দর্শনে কিছু নেই। উভয় সম্প্রদায়ই বাউল হয়। তারা জন্মগতভাবে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান হলেও যখন বাউল ধর্মে দীক্ষিত হয় তখন তারা জাতি, ধর্ম, বর্ণ সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে গিয়ে এক মহান মানবতাবাদী দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গী লাভ করে। মুসলমান বাউলেরা 'বে-শরাহ' ফকির নামে অধিক পরিচিত। তাঁরা নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত প্রভৃতি শরিয়তের বিধান বিশ্বাস করতেন না। সেকারণে তাঁরা সেসব শরিয়ত বিধান মেনেও চলতেন না।
বাউলবাদের প্রেমতত্ব দুই ধরণের হয়। প্রথমত হলো "ভবের পিরিত" এবং দ্ধিতীয়ত "খোদার পিরিত"।
যে প্রেম মানুষকে ইহজাগতিক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট করে তা হলো ভবের পিরিত। আর যে প্রেম তার মনের মানুষ বা স্রস্টার প্রতি আকৃষ্ট হতে অনুপ্রাণিত করে তা হলো খোদার পিরিত। অধিকাংশ বাউলই ভবের পিরিত বলতে যৌন আকর্ষন বহির্ভূত এক ধরনের অনুভূতি বা তাদের ভাষার নিষ্কাম প্রেমই বুঝে থাকেন।
বাউলরা সমস্ত সামাজিক বন্ধনের প্রতিকূলে থাকে। তারা মোটেও সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে সমর্থন করেনা। কোন প্রতিষ্ঠানিক ধর্মীয় নীতিমালার উপরেও বাউলরা নির্ভরশীল নয়। বাউল দর্শন বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের মানুষকে সকল বিভেদের উর্ধ্বে গিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়ে একই বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। তাইতো বিশ্বকবি "রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর" বলেছেন, বাউলবাদ হিন্দু, মুসলমান সহ বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের মিলমেলা। বেঁচে থাকুক বাউল দর্শন।
Comments
Post a Comment
Why?